বাড়ি ফেরা

@minhaz007 · 2023-12-01 02:49 · life

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রওয়ানা দিলাম।

IMG20230909093842.jpg ছবিটা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের,ট্রেনে উঠার আগেই তুলেছিলাম

রাত ৪.২৫ মিনিট ডোমার রেলস্টেশন। এতো রাতে গাড়ি পাওয়া দুষ্কর।

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা অটো পেলাম। গলায় একটু পানি ঢেলে নিলাম। ভাড়া কয়েকগুণ বেশি।

প্রতিবার বাড়ি আসার সময় একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। গতবারের মতো এবারেও ফিরেছি চিলাহাটি এক্সপ্রেসে। ট্রেন ডোমার স্টেশনে পৌঁছায় ৪.২০ মিনিটে। একলা চলার একটা আনন্দ আছে, যদিও কিছু ঝামেলার মুখোমুখিও হতে হয়।

অটোতে আমার বিপরীতে একজন বয়স্ক পুরুষ এবং পাশের সিটে একজন বয়স্ক মহিলা বসেছেন। মহিলা পান চিবাচ্ছে। আমার নানিও পান খায় তবুও এ মহিলার পান খাওয়া আমার কাছে ভালো লাগছে না। অটোটা চলতে শুরু করেছে। আমি বাইরে তাকিয়ে রাত দেখছি, ঠিক রাতও দেখছি না। মহিলা আমাকে ডাক দিল, কই যাচ্ছ বাবা?

আমি-ঃ বামুনিয়া। একটু থেমে ভদ্রতার সহিত জিঙ্গেস করলাম, আপনারা?

মহিলা-ঃ বোরাগাড়ি। ছেলের বাসায় গিয়েছিলাম। কোথায় থেকে আসতেছ?

আমি-ঃ এইতো ঢাকা থেকে। আমি ভিষণ ক্লান্ত তাই কাটছাট জবাব দিলাম যেন আর কোন কথা না বলে। কিন্তু এরপর থেকেই মহিলার কথা শুরু হলো। আমি মহিলার কথা যদিও শুনছি না বা মহিলার দিকে তাকাচ্ছিও না তবুও তিনি নিজে নিজে বকবক করেই যাচ্ছেন। হাহাহা! ভালোই লাগছে।

মহিলা-ঃ একটাই ছেলে। ঢাকায় চাকরি করে। মায়ের ন্যাওটা। স্ত্রীকে গ্রামেই রাখতে চেয়েছিল মা'র সেবা করার জন্য। নিজেই ছেলের বউকে ঢাকায় পাঠিয়েছে জোর করে, ছেলের খাওয়া দাওয়ায় সমস্যা। বকে যাচ্ছে অনর্গল; ছেলের বউটাও ভালই তবে, পরের মেয়েতো। বউটা এমনিতে আমার সাথে খারাপ করেনি কখনো। এমন অনেক কথা।

ওঁনার কথা শেষ না হতেই অটো এসে দাঁড়ালো বোড়াগাড়ি ব্রিজের সামনে দু'জনেই নেমে গেলেন; বাড়ি আশেপাশেই কোথাও।

যা'হোক, এবার আমার পালা। অটো চলতে চলতে এসে থামলো আমাদের বামুনিয়া "নাসির চেয়ারম্যানের মোড়ে।"

নামলাম।

নেমে, একটু হেঁটে এসে একটা বাঁশঝাড়ের নিচে দাঁড়ালাম। হঠাৎ মনে পড়ল ছোটবেলায় ক্লাস ছয়, সাত এবং আট-এ থাকা অবস্থায় এ বাঁশঝাড়টাকে কিযে ভয় পেতাম! দিনের বেলায়ও এর নিচে দিয়ে একলা যেতাম না। দুই-একজন থাকলেও দৌঁড়ে বা জোড়ে সাইকেল চালিয়ে পার হতাম। আর আজ একটুও ভয় পেলাম না। মনে হল বাঁশঝাড়টা যেন বলছে, 'এতদিন কোথায় ছিলে বন্ধু! এখন আর আমাকে ভয় পাও নাতো?' আগ্রহ নিয়ে চারপাশটা দেখলাম। এখান থেকে আমাদের বাড়ি দেখা যায়। তবে এখন দেখা যাচ্ছে না; কুয়াশা এবং অন্ধকার। দুপুর বেলা সূর্যের আলোয় চালের টিন চিকচিক করে।

একটু দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম। আনন্দে বুকটা ভরে উঠল। এই বাশঝাড়, এই রাস্তা, দু'পাশের ধানক্ষেত, রাতের আধাঁর, ঝিঁঝিঁপোকার ডাক কত চেনা! কত আপন! এতগুলো আপনজনকে একসাথে আবিষ্কার করার পর আমি নিজেকেই যেন হারিয়ে ফেলেছি। একটা স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে। অতল-অসীমে হারিয়ে ফেলছি নিজেকে। চলার গতিটা স্বাভাবিক ভাবেই মন্থর হয়ে এল।

IMG20230909160559.jpg

বাড়ির সামনে ছোট ব্রিজের (ছোট পুলের) উপর এসে দাঁড়ালাম। প্রতিবার, যখনই বাড়ি আসি এখানে এসে দাঁড়ানোর অনুভূতিটা অন্য রকম। নিজের ওজনটা যেন কমে যায়। বুকটা আবেগে ভারি হয়ে আসে আর লাজুক একটা ভাব যেন নতুন বউ; ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য একটা অনভূতি।😄

ঠুক... ঠুক... ঠুক...।

-আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

দরজা খুলে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে মা। এইতো আমি চাই। তোর এ হাসির জন্যইতো এতদূর ছুটে আসি। এই মুহূর্তে আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ সম্ভবত তুইও, তাইনা মা!?

বাড়িতে প্রায় ০৫ মাস পর।

#life #writing #freewrite #home
Payout: 0.000 HBD
Votes: 78
More interactions (upvote, reblog, reply) coming soon.