পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম? সেটা আবার কি জিনিস? ছোট্ট ছেলেটি খেলার সময় এসবের সাথে পরিচিত নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছোট্ট ছেলেটি ব্যাট হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে যেত ক্রিকেট খেলার জন্য। খাওয়া-দাওয়ার কোনো নাম নেই। বাবা গিয়ে ধরে নিয়ে আসত ছোট্ট ছেলেটি সকালের খাবার খাইয়ে দিত। সকালের খাবার খেয়ে আবার ছোট্ট ছেলেটি খেলতে চলে যেত।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও ছোট্ট ছেলেটি বাড়ি ফিরত না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মা গিয়ে তাকে ধরে না নিয়ে আসে। মা মাঠের এককোনা থেকে ছোট্ট ছেলেটিকে ধরে পিঠের উপর দু-একটা আপ্যায়ন করে বাড়ি নিয়ে আসত। তারপর মা ছোট্ট ছেলেটিকে দুপুরের খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত। কিন্তু ছোট্ট ছেলেটি ঘুম আসত না, চোখ বুজে থেকে ঘুমের অভিনয় করত শুধু। বিকেলে আসরের আযান দিলে ছোট্ট ছেলেটিকে আর দেখে কে! এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে চলে যেত খেলার জন্য। ছোট্ট ছেলেটি এত খেলতে পছন্দ করত যে খেলাই মনে হয় ছিল তার জীবন। সন্ধ্যার সময় মা ছোট্ট ছেলেটিকে হাত-মুখ ধুইয়ে পড়তে বসাতেন। ছোট্ট ছেলেটি পড়ার সময় অপেক্ষা করত যে কখন বিদ্যুৎ চলে যাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই এক লাফে পড়ার টেবিল থেকে উঠে বাইরে গিয়ে সমবয়সী ছেলে মেয়েদের সাথে আনন্দে মেতে উঠত। শীতের সময় পানি দিয়ে বদম খেলার দাগকেটে ছোট্ট ছেলে সকলের সাথে বদম খেলত। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। সকলেই এই খেলায় অংশগ্রহণ করত। গোল্লাছুট খেলায় ছোট্ট ছেলেটি অনেক পারদর্শী ছিল। ছোট্ট ছেলেটি অনেক সময় সবার সাথে কানামাছি খেলত।
অনেক সময় ছোট্ট ছেলেটি সমবয়সীদের সাথে ব্যাডমিনটন খেলায়ও অংশগ্রহণ করতেন। ছোট্ট ছেলেটি ফুটবল খুব একটা ভালো খেলতে পারত না। তখন নিয়ম ছিল যে ভালো খেলতে পারবেনা সে গোলকিপার থাকবে। তাই ছোট্ট ছেলেটি সবসময় গোলকিপার হিসেবেই খেলতেন। ছোট্ট ছেলেটি এখন বড় হয়ে গেছে।
ছোট্ট ছেলেটি এখন চাইলেও আর সকালে ঘুম থেকে উঠে খেলতে যেতে পারেনা। এখন সে ঘুম থেকে উঠে প্রাইভেট পড়তে যায়। সে খেলার জন্য যেটুকু সময় পায় সে সময়টাতেও খেলতে পারেনা। সে যাদের সাথে খেলত তাদের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেউবা আবার সংসারের হাল ধরেছে। আবার কেউ কেউ অপসংস্কৃতির প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের কাছে খেলার মতও সময় নেই। খেলার সময় হলেও নেই খেলার মতো পর্যাপ্ত জায়গা। ছোট্ট ছেলেটি যেখানে সমবয়সীদের সাথে খেলত সেখানো এখন দখল করে আছে বাড়ি-ঘর। সেই ছোট্ট ছেলেটি এখন খেলতে গেলেও তার বাব-মা আর তাকে ধরে নিয়ে এসে খাইয়ে দেয়না কারন ছোট্ট ছেলেটি এখন বড় হয়ে গেছে।
Thank you for reading my post. I have already posted this short story in my facebook account. Here is the link.