
ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মনটা তিক্ত হয়ে উঠেছে। এই তিক্ত মনকে মিষ্টি করতে ভ্রমণের ইচ্ছা জাগে। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে তা আর হয়ে ওঠেনা। মুক্ত পাখিকে খাঁচাবন্দী করলে তা ডানামেলে উড়তে চায়। মনটাও ঠিক সেরকম হয়ে গেছে। ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যেতে, ইচ্ছে হচ্ছে ডানা মেলে উড়তে। মনে পডে যাচ্ছে পুরনো সেই দিনগুলোর কথা। তখন বোধহয় ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি। অনেক ইচ্ছে থাকলেও নৌকা ভ্রমণের স্বাদ তখনো গ্রহণ করা হয়নি, শুধু শুনে এসেছি। সেই ইচ্ছেটা যেন একটা খাঁচাবন্দী পাখি, চায় ডানা মেলে উড়তে কিন্তু খাঁচাছাড়া হতে পারেনা। তবে একদিন সেই ইচ্ছেটা যেন খাঁচাছাড়া হতে লাগল। আব্বু বলল যে কাল নৌকাভ্রমণে যাবে। নৌকাভ্রমনের ইচ্ছেটা মনে মনে ডানা মেলতে শুরু করল। মনটা খুশিতে ভরে উঠল। মনের আনন্দে এক কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম। খুশিতে খাওয়া-দাওয়া, গোসল সব ভুলে গেলাম। খুশিতে রাত্রীনিদ্রা যেন হারাম হয়ে গেল। সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। কাল দিনটা কেমন হবে, কিভাবে কাটাব- এটা ভাবতে ভাবতে রাত্রী অতিবাহিত হলো। সকাল ৯ টার আগে ঘুম থেকে উঠিনি কখনো। সেদিন সকাল ৬ টায় বিছানা থেকে উঠতে দেখে সবাই একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেল। সবাই আমাকে নিয়ে একপ্রকার মজা করতে শুরু করল। সবাই বলতে লাগল, "ছেলে মনে হয় বিয়ে করতে যাবে তাই ৯ টায় না উঠে ৬ টায় উঠেছে।" কথাটা শুনে একপ্রকার লজ্জা পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর তারাতারি কোনোমতে সকালের নাস্তা করে, গোসল করে নৌকায় গিয়ে উঠলাম। নৌকাটিকে অনেক সুন্দর করে সজ্জিত করা হয়েছে। নৌকায় উঠেই শুনতে পেলাম সাউন্ড সিস্টেমের শব্দ। একটু পর সবাই নৌকায় উঠে পড়লে নৌকা ছেড়ে দিল। নৌকা নদীর বুক চিরে ছুটে চলল। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। নদীর দুইপাশের মনোরম দৃশ্য আমার মন কেড়ে নিল। অবাক দৃষ্টিতে হা করে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটা জনমানবশূন্য দ্বীপে নৌকা থামানো হলো। তখন সাঁতার জানতাম না। আব্বু, কাকা এদের নদীতে গোসল করতে দেখে আমারও শখ হলো। তাই নদীতে নেমে পড়লাম। বেশি গভীরে গেলাম না, অল্প পানিতেই লাফালাফি করলাম। তারপর নৌকায় উঠে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বাড়ির পথে রওনা হলাম। সন্ধ্যার দিকে কাকার সাথে নৌকার ছৈয়ের ওপরে উঠে বসলাম। এতো মিষ্টি বাতাস লাগল যে বাতাসের প্রেমে পড়ে গেলাম। রাত নেমে আসলে হঠাৎ আকাশে দেখতে পেলাম ৯-১০ ফুট সাপের মতো লম্বা একটা আগুন। চোখের পলকেই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল। যদিও ভূতে বিশ্বাস করতাম না, তবুও এটা দেখার পর মন মানসিকতা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। এক চিৎকার দিলাম। নৌকার সবাই ছৈয়ের কাছে ছুটে এলো। কাকা পাশেই ছিল। তিনি আমাকে বুকে চেপে ধরে বললেন, "কি হয়েছে?" আমি বললাম ভূত। তিনি বললেন, "কোথায় ভূত?" আমি তার কাছে সব বলার পর তিনি বললেন, "গাধা, এটা হলো উল্কা। এটা মহাকাশে ঘুরে বেড়ায় আর বাতাসের সংস্পর্শে আসলে পুড়ে যায়।" তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে লজ্জিত হলাম। অতঃপর নাচ-গানেক মাধ্যমে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরলাম।
