জীবনে চলার পথে বন্ধুর প্রয়োজন হয়।কিন্তু আমি ঘরকুনো মানুষ। তেমন কোনো বন্ধু নেই।আড্ডা দেওয়া হয় না।শহরে যেখানে থাকি সেখানে বন্ধু না থাকলেও গ্রামে কিছু ছোট-বড় ভাই রয়েছে।যাদের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তাদের সাথে আমি অনেক খোলাখোলি ভাবে কথাবার্তা বলি।
করোনা ভাইরাসের সময় দীর্ঘ ছুটি পেয়েছি।প্রচুর বেকার সময়।সেই ভাইদের সাথে খেলাধুলা আড্ডাবাজি করে সময় কাটাচ্ছি।এখন বর্ষাকাল।গাঙ পানিতে ঠাইটম্বুর।মানুষজন বিভিন্ন কায়দায় মাছ মারে।সেগুলো দেখেও সময় কেটে যায়।
যেদিনের কথা সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেদিনের কথাই আজ বলবো।
রাতের খাওয়া শেষ করে বাহিরে হাঁটাচলার একটা অভ্যাস আছে আমার।তো আমি, আমার মামাতো ভাই পান্থকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হলাম,সাথে মাঝপথের বাড়ি থেকে আরেকটা ছেলেকে নিয়ে নিলাম।সে ঐ বাড়িতে মেহমান এসেছে,নাম রায়হান। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা গাঙের পাড়ে এসে পড়লাম।সেখানে একটা পুল ছিলো।পুলের মধ্যে বয়ে আসছে গাঙের বাতাস।অনেক আরামদায়ক। আকাশে আবার চাঁদমামা ঝিকঝিক করে জ্বলছে।সেই আলো গাঙের পানিতে প্রতিফলিত হয়ে চারপাশ কোমল আলোয় আলোকিত করে রেখেছে।একটা অভূতপূর্ব পরিবেশ।
পুলের রেলিং এর মধ্যে আমরা বসে গল্প শুরু করলাম।গল্প হচ্ছে "টেম্পু" চালানো নিয়ে।টেম্পু চালানো বলতে প্রেম করা আরকি।তো পান্থ বলতেছে,সে নাকি জীবনেও টেম্পু চালাই নাই।আমি বললাম,আমিতো টেম্পু কি জানিই না,টেম্পু যে দুনিয়াতে আছে সেটাই আজ শুনলাম।আমরা আসলে রায়হানকে নিয়ে ট্রল করছিলাম।সে নাকি ইদানীং কোথাও "টেম্পু চালাচ্ছে"।পান্থ বললো,মনে করো রায়হান এখন যদি কোনো টেম্পু এসে তোমাকে বলে,"রায়হান চলো যাই পাঠক্ষেতে"। তখন তুমি কি করবে?এসব নিয়ে হাসাহাসি করছি।
আমি আর রায়হান পুলের রেলিং এ বসে আছি,পান্থ আবার উঠে গিয়ে সেই দৃশ্য অভিনয় করে দেখাচ্ছে। এমন সময় হলো কি দূর থেকে একটা সিএনজি আসছে দেখা যাচ্ছে। সিএনজির ফ্রন্ট লাইটে প্রচুর আলো দিচ্ছে।তখন রাত প্রায় বারোটা বাজে।আমরা চিন্তা করছি,এতো রাতেতো সিএনজি চলার কথা না।ভাবতে ভাবতেই সিএনজিটা ঠিক আমাদের সামনে এসে থামলো।
থামতেই দেখি লাঠি হাতে পুলিশ।বলে,এতো রাতে এখানে কি করিস?পুলিশ হয়তো ভাবছে বখাটে ছেলেপেলে রাতে নেশা করার জন্য এইখানে বসে রয়েছে।আজকাল আবার বখাটে ছেলেদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছে।এইজন্যই পুলিশের এই টহল।
সে যাই হোক,পুলিশ দেখার সাথে সাথেই রায়হান দিছে দৌড়।এমন দৌড় দিয়েছে যে,সে রাস্তার কাদায় পিছলা খেয়ে গাঙে গিয়ে পড়েছে।এইদিকে পান্থ তো ঠিক পুলের মাঝখানে ছিলো।সে পুলিশের ঠিক সামনে পড়েছে।সে পুলিশকে বুঝানোর চেষ্টা করছে যে আমরা কোনো বখাটে ছেলে না।কিন্তু কে শুনে কার কথা।ধুমছে দিছে বাড়ি।অন্যদিকে আমি সিএনজির পিছনে গিয়ে লুকিয়েছি।পুলিশ ইতোমধ্যে সিএনজি থেকে নেমে পড়েছে।নেমে বলে, "এখনো দেখি দাঁড়ায়া আছে" দৌড় দে না হলে দিমু বাড়ি"।লাঠি নিয়ে দৌড় দেখালো,আমি আর পান্থ দৌড় দিলাম।তারপর পুলিশ চলে গেলো।
তখনি মনে হলো,আরে আমাদের সাথে না, রায়হান ছিলো।সে গেলো কোথায়।আমরা ডাক দিলাম,তারপর দেখি সে, পানিতে থেকে সাড়া দিলো,"শাওন ভাই,আমি এইহানে পানিতে।" আমরা গিয়ে তাকে কাঁদা মাটি মাখা অবস্থায় পানি থেকে টেনে তুললাম।
তারপর তিনজন মিলে বললাম,"মনে থাকলে আর রাতে রাস্তায় আড্ডা দিতে আসবো না"।