আচ্ছা লেখকরা যা লিখে সব কি তাদের জীবন থেকে নেওয়া?হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো তা ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমি লিখতে ভালোবাসি। সামনে যা দেখি তা লিখি। প্রতিবেশীর জীবন কাহিনি লিখে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করি। বান্ধবীর জীবনে কিছু একটা ঘটে গেছে লিখার মাধ্যমে সেটা ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করি।
আমি ছোট থেকে সাহিত্য পড়তে ভালোবাসতাম। ভালোবাসতাম বলার কারণ সাত বছর হয়ে যাচ্ছে সাহিত্য পড়িনা।আসলে প্রবাসে এসে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও গল্প কবিতা পড়ার সময় হয়ে ওঠেনি।যদিও এগুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। এসব কথা রেখে আসল কথায় আসি।
সেদিন একটা কবিতা লিখলাম। আমি যা কিছু লিখি সেটা ভালো হোক কিংবা মন্দ মানহার বাবাকে সেটা পড়ে শোনায়।কারণ সে আমাকে লিখতে খুবই উৎসাহ দেয়।কিন্তু ঐদিন কবিতাটা পড়ার পর সে হাসছিলো আর আমার দিকে তাকাচ্ছিলো যেন সেটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা।যা দেখে আমি রীতিমতো লজ্জা পেয়ে গেলাম। বিষয়টা বুঝার সুবির্ধাথে কবিতাটি নিচে দিয়ে দিলাম।আমার কবিতার নাম ’জন্মতিথি’।
অজপাড়াগাঁয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার।সোনার চামচ তো ছাড়ো, স্টিলের চামচে ধনিয়া ভিজানো পানি পেয়েছি কিনা জানা নাই। আমার জন্মে আনন্দের ধামামা বাজেনি। মিষ্টি বিলানো হয়নি চারদিকে। আমার মুখ দেখে মা হয়তো প্রসব বেদনা ভুলতে পারেনি। বরং লজ্জা পেয়েছে এই ভেবে সবাই কি বলবে।দাদী হয়তো রাগ করে মুখ দেখতে আসেনি। নানী আসেনি দায়িত্ব পালন করতে। বাবা হয়তো কষ্ট পেয়ে পাথর চাপা দিয়েছে বুকে।আমার আগমনে কেউ স্বপ্নের জোয়ারে ভাসেনি।পাড়া প্রতিবেশী পালা করে দেখতেও আসেনি।জন্মের সপ্তম দিনে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। মসজিদে দোয়ার আবেদনও করা হয়নি। আমি কান্না করলে কেউ ব্যস্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। আমার বাড়িতে খেলনার বস্তা আসেনি, আসেনি বাহারী খাবার। আমি বাবার কলিজা নই মায়েরও নই প্রাণ। আমি অনাখাঙ্খিত, পরিবারের তৃতীয় কণ্যা সন্তান। তাই জন্মতিথি বলো কিংবা জন্মলগ্ন আমার কাছে তা যে খুবই নগন্য।
হ্যাঁ আমি মা-বাবার তৃতীয় কণ্যা সন্তান কথাটি সত্য।তাই বলে আমার মা বাবা কখনো অনাদর করেনি। কিংবা এ কবিতাটি আমি আমাকে নিয়ে লিখিনি।আমি কবিতাটি লিখিছি চিরন্তন সত্যি ভেবে। আমরা যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি।আচ্ছা পুরুষ তান্ত্রিক সমাজও বাদ দিলাম আমাদের সমাজের প্রতিটি মা বাবা পুত্র সন্তান কামনা করে সে যে কারণেই হোক।আর দুটি কন্যা সন্তান থাকা সত্বেও যে বাবা মা তৃতীয় সন্তান গ্রহণ করে,তার নিরানব্বই শতাংশ মানুষ তা একমাত্র পুত্র সন্তান লাভের আশায় সেটা করে।
সেই সন্তান যদি মেয়ে হয়, মন ক্ষুন্ন সবারই হয়। কেউ স্বীকার করে কেউ করে না। কেউ সত্যকে সহজ ভাবে গ্রহণ করে কেউ গ্রহণ করতে পারে না।এটাই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই সত্যিটাই আমি লিখেছি। এর উপজীব্য কখনো আমি নই।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি পড়েছি হুমায়ুন আহমেদের বই। তিনি কত ধরনের বই লিখেছেন আচ্ছা সবই কি ওনার ব্যক্তি জীবন। তাহলে কয় ধরনের লাইফ লিড করেছেন! কিংবা কত ধরনের ব্যক্তিত্ব বিরাজমান ওনার মাঝে।যে ভালোবেসে লিখে সে সামনে পরে থাকা ভাঙা কলস নিয়ে ইমোশনাল স্টোরি লিখতে পারে।কিংবা তুচ্ছ কোনো বিষয় কে হাসির উপজীব্য করে তুলতে পারে।
একজন লেখকের কাজ লিখা সে তার লিখাকে মনোরম করতে অনেক রং রস ব্যবহার করে। কিন্তু দিন শেষে তারাও সাধারণ মানুষ সে সব সময় নিজের জীবনকে আলোক উজ্জ্বল করে রাখতে পারে না।তারা পাশের বাড়ির মেয়ের জীবন কাহিনি লিখার সময় এমন আবেগ দেয়। সবাই মনে করে এটা লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া অতিসাম্প্রতিক কোনো ঘটনা।