বিচ্ছেদ

@shaonashraf · 2023-09-10 19:45 · shaonashraf

আমার এক বন্ধুর আজ ডিভোর্স হয়ে গেলো।ওর নাম রসিয়া।ও ইন্দোনেশিয়ান।ওর স্বামী মালয়েশিয়ান।ওদের তিনটা বাচ্চা। বড় ছেলের বয়স নয় বছর আর ছোট ছেলেটার বয়স তিন মাস। আমি বুঝতে পারিনা একটা মানুষের সাথে দশ বছর সংসার করার পর কিভাবে ভাঙন ধরে। তাদের যদি মতের অমিল হতো কিংবা একজন আরেকজনকে না বুঝতো তাহলে দশটা বছর একসাথে কেমন করে কাটিয়ে দিলো?

রসিয়ার সাথে আমার পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব। আমি রস বলে ডাকি।ঐছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত ওর জীবনের প্রতিটা কাহিনি সে আমাকে বলে।এই দশ বছরের সংসার জীবন সব সময় মসৃণ ছিলো এমন নয়।দুঃখ, কষ্ট অভাব সবই ছিলো। কিন্তু ভালোবাসার কাছে সব কিছু হার মেনেছে। এবার আমার প্রশ্ন সে ভালোবাসা আজ কেনো হার মানলো।আজ তাদের সম্পর্ক বেঁধে রাখার জন্য তিনটে অবিনাশ যোগ্য সুতো থাকা স্বত্বেও কেনো ছিঁড়ে গেলো এ সম্পর্ক।

আসলে সম্পর্ক ভেঙেছে ওদের,কিন্তু হিসাবের মিলানোর দ্বন্দ্বে আমি কাহিল।তিনটা বাচ্চার মুখ কিছুতেই ভুলতে পারছি না।সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি ছোট বাচ্চার কথা ভেবে।একটা বাচ্চার জন্য বাবা মা দুজনেই কতোটা গুরুত্বপূর্ণ মা হওয়ার আগে হয়তো আমিও বুঝতাম না। কিন্তু এখন বুঝি।

গত সপ্তাহের মানহার একটা গল্প বলা যাক।মানহা কয়েকদিন যাবৎ দিনে ঘুমাবে না।আবার সন্ধ্যা হলে তাকে ধরে রাখাও যাবে না ঘুমিয়ে যাবে। আটটার সময় ঘুমিয়ে নয়টা কি পনে নয়টায় ওঠে যাবে। এরপর সে ঘুমাবে না।দেড়টা বেজে যাবে দুইটা বেজে যাবে।আবার ওর যখন ইচ্ছে বাবার কোলে ওঠবে তখন সে আমার কাছে আসবে না।তাকে কোলে নিয়ে সারা ঘর ময় হেঁটে বেড়াতে হবে দীর্ঘ সময়।

আবার গতকাল সে এগারোটায় ঘুমিয়েছে। আচ্ছা ভালো। রাত চারটায় ওঠে বসে আছে আর ঘুমাবে না।প্রথমে আমাকে টেনে তুলে আমার পায়ের উপর শুয়ে আছে।ভালো কথা শুয়ে ঘুমাচ্ছে আচ্ছা কিছুক্ষণ পর শুইয়ে দেবো।শুইয়ে দিতে গেলাম দেখি তিনি ঘুমাননি। ভাবলাম ঠিক আছে বসে থাকি আর কিছুক্ষণ কিন্তু তিনি এখন পায়ের উপর শুইবেন না।এবার বাবাকে চুলে ধরে টেনে তুললো। এখন বাবা তাকে কোলে নিয়ে হাঁটবে।বাবা উঠে ওকে কোলে নিয়ে এক ঘন্টা হাঁটারপর সে ঘুমিয়ে গেলো।

নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হলেও অন্যের সন্তানের ক্ষেত্রে তা কখনো সম্ভব না। মানুষ যতই বলুক আমরাও সন্তান আছে সন্তানের অনুভূতি আমি বুঝি।কিন্তু বাস্তবে মানুষ নিজের সন্তানের জন্য যে অনুভূতি তা অন্যের সন্তানের ক্ষেত্রে অনুভব করে না।এটা মানলেও সত্য না মানলেও সত্য।

রসিয়ার বর্তমান বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। সতেরো বছর বয়সে ও মালয়েশিয়া আসে।ওর স্বামী মালয়েশিয়ার নাগরিক। বয়সে ওর থেকে তিন বছরের ছোট। মালয়েশিয়ায় এসে রসিয়া যেখানে থাকতো তার পাশেই ওর স্বামী পরিবারের সাথে থাকতো।বয়সে রসিয়ার ছোট হলেও মোটাসোটা লম্বা মানুষ হওয়ার চোখে তা ধরা পড়ে না। পাশাপাশি থাকার সুবাদে রসিয়ার সাথে পরিচয় সেখান থেকে প্রেম। সাত বছর প্রেমের পর বিয়ে।

বিয়ের পর একবছর দুজন মিলে চাকরি করে সেই টাকা দিয়ে একটা কাপড়ের ব্যবসা দেয়।ব্যবসায় রসিয়া বেশিদিন দেখাশোনা করতে পারেনি। ওর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।ওর স্বামী হয়ে ওঠে ব্যবসার সর্বেসর্বা।এরপর দ্বিতীয় সন্তান, তৃতীয় সন্তান। রসিয়ার আর কোনো দিকে তাকানোর সময় নাই। সন্তান সংসার নিয়ে সে ব্যস্ত।স্বামীর ব্যবসা বড় হচ্ছে সেও ব্যস্ত।বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকে। রসিয়া কিছু মনে করে না।ভাবে ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।ওর স্বামী ধীরে ধীরে অন্যের ঘরে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে সে কল্পনা করতে পারেনি।অল্প বয়সী তাদের দোকানে কর্মরত মালয়েশিয়ান এক মেয়ের সাথে তার পরকীয়া সম্পর্ক শুরু হয়।প্রথম প্রথম অন্য কর্মচারীরা এসে রসিয়াকে বললে রসিয়া বিশ্বাস করেনি।

সতেরো বছরের ভালোবাসা তার মিথ্যা হতে পারে সে ভাবতে পারেনি।কিন্তু স্বামীর আচরণ দিন দিন যখন পরিবর্তন হতে শুরু করলো তখন সে বুঝতে পেরেছে। এরপর ছয়মাস ঝগড়া করেছে,বুঝিয়েছে কিছুতেই কিছু হয়নি। সে ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে। আবার ঐ মেয়ে সতীনের সংসার করবে না।তাই সে রসিয়ার সাথে থাকতে পারবে না।নিজের সন্তানদের কথা ভাবার তার সময় নেই।যারা সন্তানের ভালোর কথা ভেবে এইটুকু ছাড় দিতে পারেনা তারা কেনো মা বাবা হয় আমি জানিনা।কিন্তু এমন বাবা যেনো পৃথিবীর কারও না হয়।

16372638491436990511162.jpg

#shaonashraf #blog
Payout: 0.000 HBD
Votes: 79
More interactions (upvote, reblog, reply) coming soon.