বাড়ির মায়া

@shaonashraf · 2024-01-21 16:32 · shaonashraf

বড় বাড়ি,বড় ঘর,বড় বংশ দেখে আমার নানা আমার মাকে বিয়ে দিয়েছিলেন।যদিও আমার বড়মামা রাজি ছিলেন না একদম।সবই ঠিকঠাক তবে আমার বড় মামা রাজি না থাকার কারণ মামা খোঁজ নিয়ে দেখেছিলেন ছেলে একটু বাউণ্ডুলে স্বভাবের।মানে সংসারী না।কিন্তু নানা এখানেই বিয়ে দেবেন।তাই মামা বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছিলেন।

আমার বাবা চাচারা ছয়ভাইবোন ছিলেন।আমার দাদীর তিনটি কণ্যা সন্তানের পর আমার বাবার জন্ম।তাই আমার বাবা একটু আদরে বাদর ছিলেন এই যা।বেশি আদরে বড় হওয়ায় দায়িত্ব বিষয়টা ঠিক আয়াত্ব করতে পারেননি।কিন্তু আমার আম্মার বিয়ের পর সব ঠিকই ছিলো। আমার দাদা তার বাউণ্ডুলে ছেলের জন্য দেখে শুনে একজন বুদ্ধিমতী,সংসারী বউ এনেছেন।তাই দাদা খুব নিশ্চিন্ত।

বিয়ের বছর দেড়েক পর আমার বড় আপার জন্ম হলো।বড় আপার জন্মের তিন মাস পর আমার দাদা মারা গেলেন।সব পাল্টে গেলো।আমার বাবার বাউণ্ডুলে স্বভাবের সুযোগ নিলো আমার চাচা।বাড়ি রেখে সব জমি বিক্রি করে দিলো। আব্বাকে বললো এসব বিক্রি করে বিদেশ যাবে পরে আব্বা কে আবার সব জমি কিনে দিবে।আব্বা রাজি হয়ে দিয়ে দিলো।বড়মামা আব্বা কে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করলো, আব্বা বুঝেনি।

তাই তিনি রাগ করে নিজের বোনকে নিয়ে গেলেন।নানা তখন নিজের সিদ্ধান্ত ভুল বলে মেনে নিলেন। আম্মাকে বুঝালেন আমি ভুল করেছি আমি তোকে আলাদা বাড়ি করে দিবো।তুই সেই বাড়িতে থাকবি ঐ বাড়িতে আর যাওয়ার দরকার নাই। আম্মা কিছু দিন থাকলো মামার বাড়িতে। এরপর একদিন রাতের অন্ধকারে বড় আপাকে নিয়ে পালিয়ে চলে গেলো আমাদের বাড়িতে।

এরপর আমার ছোট আপার জন্ম হলো।তখনও আমাদের বড় একটা বাড়ি ছিলো।কিন্তু আমার চাচা আব্বাকে আবার বুঝালেন বিদেশে যেতে আরো টাকা লাগবে তাই গরু,ছাগল,বড় ঘর সব বিক্রি করলেন।সাতটা টিন এনে একটা একচালা ঘর বানালেন আমার দাদার ভিটেতে।সেই একচালার দুই পাশে দুটি চৌকি ছিলো।একটায় থাকতো আম্মা আমার দুইবোনকে নিয়ে অন্যটাই আমার দাদু।কাকার আর বিদেশ যাওয়া হয়নি।ওনি ঢাকাতে বিয়ে করে সংসার পাতলেন।

সেই একচালা টিনের ঘরে আমার জন্ম।যদি ও সেই ঘরের কথা আমার মনে নেই।আমার আম্মা আবার সেই ভিটেতে দুই তিন বছর পর চৌচালা বড় টিনের ঘর তুলেছেন।শুধু আম্মা আম্মা করছি কেনো?ঐযে প্রথমেই বললাম দায়িত্ব বিষয়টার সাথে আমার বাবার পরিচয় ছিলো না।তিনি কখনো ঢাকা,কখনো কালিয়াকৈর,কখনো রংপুর, কখনো বা দিনাজপুর থাকতেন।

বছরে দুই একবার আসতেন দুইদিন তিনদিন থাকতেন চলে যেতেন।আমরা কি খাচ্ছি,কি পড়ছি এসব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।আম্মা পাড়ার বাচ্চাদের পড়াতেন হাঁসমুরগি পালন করতেন,বাড়িতে সবজি চাষ করতেন এভাবেই চলতো আমাদের।আমাদের বাড়ি বলতে আমি দেখেছি দক্ষিণ পাশে চৌচালা টিনের ঘর,পশ্চিম পাশে একটা রান্না ঘর,উত্তর-দক্ষিণ কোনায় টিউবওয়েল।সেই বাড়িতে হেসে খেলে বড় হয়েছি আমি।

আমি ইন্টার পাশ করে ঢাকায় এসেছি।এর মধ্যে আমি কোথাও বেড়াতে গিয়ে দুই একদিন এর বেশি থাকিনি।এমনকি আমি স্কুলেও যেতাম কম।আমাদের বাড়িটা অনেক বড়।বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ,পুকুর,বাঁশঝাড় সব মিলিয়ে একটা বাগান বাড়ির মতো।পুকুরে মাছ ধরতাম,গাছে গাছে চড়ে ফল খেতাম,বাঁশঝাড় থেকে পাখির ছানা ধরতাম,বক ধরতাম,কাঠফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা,বিভিন্ন ধরনের শাক কুড়ানো,হাঁসের জন্য শামুক,ঝিনুক কুড়ানো,ছাগলকে ঘাস খাওয়ানো,গরুর ঘাস কাটা,জমিতে ধান কাটা,আগাছা পরিস্কার কি করিনি আমি।এরপর চলে এলাম ঢাকা।বাড়ির ঘর উত্তর পাশে বানানো হলো।বাড়ি অন্য রকম হয়ে গেলো।ঢাকা থেকে তিন চার মাস পর পর বাড়ি যেতাম।সাতদিন- দশদিন থাকতাম।চলে আসতাম।বাড়ির জন্য কষ্ট হতো তবে মায়া বুঝতাম না।

যখন মালয়েশিয়া চলে আসলাম বুঝতে পারলাম মা বাবা ভাইবোনের পাশাপাশি এ বাড়ি আমাকে টানে।দুই তিন বছর পর বাড়ি যাবো এমন ইচ্ছে ছিলো কিন্তু কেনো জানি একটার পর একটা সমস্যার কারণে বাড়ি যেতে পারিনি।আট বছর কেটে গেলো।এতো বছর পর এখন বাড়ির কথা মনে পড়লে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে।বাড়ির মাটি ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।মনে হয় বাড়ির মাটিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।গাছগুলো ছুঁয়ে দেখি।পুকুরের পানি গায়ে মাখি।

বিজ্ঞানের কল্যাণে সবার সাথে কথা বলতে পারি,দেখতে পারি তাই হয়তো এতো কষ্ট হয় না।কিন্তু বাড়ির মায়া কোনো কিছুতে কাটাতে পারি না।এলাকার ভিডিও দেখলে চোখে পানি চলে আসে,ভাষা শুনলে কান্না আসে,এখানে কোকিলের ডাক শুনলে বাড়ি চোখে ভাসে।আজকাল বেশি মনে পড়ে।থাকতে ভালো লাগে না।কিন্তু আমিতো কাউকে কিছু বলি না,বুঝতে দেইনা।সবাই ভাবে আমার বিদেশে থাকতে ভালো লাগে।বাড়ি আসতে মন কাঁদে না কিন্তু প্রতি মুহূর্তে কত কষ্ট পাই তা আমি জানি আর জানে আমার বেড রুমের জানালা।যাতে ধরে মধ্যরাতে আমি দেশের দিকে তাকিয়ে ভাবি আমার বাড়ি দেখছি।যার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আমি ভাবি আমার উঠোনের উপরের আকাশ দেখছি।

অনেক কিছু লিখার ছিলো তবে আর পারছি না কান্না থামিয়ে রেখে কান,চোখ,নাক,মুখ ব্যাথায় অবস হয়ে আসছে।তাই এখানেই বন্ধ করলাম আমার লিখা।

IMG_20230423_172325.jpg

#shaonashraf #blog
Payout: 0.000 HBD
Votes: 84
More interactions (upvote, reblog, reply) coming soon.