সেই ছোটবেলার কথা।যখন আমি আর আমার চাচাতো বোন রিমা একসাথে খেলতাম,আর একসাথে অনেক সময় পার করতাম।তখন রিমার বয়স ছয় বছর আর আমার আট।রিমা সম্পর্কে আমার চাচাতো বোন হলেও যেন নিজের বোনের চাইতে কোন অংশে কম না।আমরা একসাথে খেলা ধুলা করতাম আর একসাথেই থাকতাম।
একটা কথা খুব মনে পরে-একদিন আমি স্কুলে গেছিলাম কিন্তু রিমা স্কুলে যায় নি।আমি স্কুল থেকে ফিরে রিমা কে জিজ্ঞেস করলাম কিরে রিমা আজকে স্কুলে যাস নি কেন?রিমা-আজকে আমার ভালো লাগে নি তাই।আমি বললাম কেন??রিমা-আম্মু বকা দিছে পড়তে বসি নি তাই। আমি রিমা কে বললাম তুই তাহলে বিকালে আমাদের খেলার জায়গায় আসবি আমরা বিকেলে ফড়িং ফড়িং খেলবো।রিমা-ঠিকাছে।
বিকেল বেলা রিমা আসলো আর আমাকে বলল ভাইয়া চলো আমরা ফড়িং দিয়ে খেলবো।আমিও গেলাম।দুইজন একসাথে ফড়িং ধরতে লাগলাম।কিন্তু কেউই ধরতে পারছি না।
আমি বার বার ফড়িং ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছি না।ওদিকে রিমার যেন ক্লান্তির শেষ নেই।ও ফড়িং ধরেই ছারবে।অবশেষে রিমা একটা ফড়িং ধরতে সফল হল।
রিমা-দেখ দেখ আমি ফড়িং ধরতে পেরেছি।আমি রিমার কাছে এগিয়ে গেলাম আর ওর হাত থেকে ফড়িং টা নিয়ে দেখতেই হাত থেকে ফড়িং টা উড়ে চলে গেল।আমি আর রিমা ফড়িং টার পিছে পিছে দৈাড়াতে লাগলাম।কিন্তু আর ধরতে পারলাম না।সেই দিনের মতো খেলা শেষ করে বাড়িতে গেলাম আমরা।ঠিক পরের দিন স্কুল থেকে এসে সুনতে পারলাম যে রিমা হাসপাতালে। রিমা নাকি স্কুল থেকে এসেই ফড়িং ধরতে গিলে দেওয়াল থেকে পরে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছে।এইদিকে আমার বাড়ি থেকে আর আমাকে খেলতে যেতে দিচ্ছে না।ফড়িং তো দুরের কথা।কিন্তু আমার অনেক ইচ্ছা আমি একটা ফড়িং ধরে রিমা কে দিবোই যেই ভাবেই হক।কিন্তু মা,বাবার চাপে বাহিরে যেতে পারছি না।বেশকিছু দিনের মধ্যেই রিমা সুস্থ হয়ে উঠলো।
আমরা আবার একসাথে খেলা করতাম।হঠাৎ দেখি রিমার হাতে ফড়িং।আমি রিমা কে জিজ্ঞেস করলাম এটা কোথায় পেলি?রিমা-আমার আব্বু আমাকে ফড়িং ধরে দিয়েছে।আমি লক্ষ্য করে দেখলাম ফড়িং টাতে সুতা লাগানো।আমি আর ফড়িং টা হাতে নেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আবার যদি উড়ে যায়!সেইদিন আমরা দুইজন অনেক মজা করে ফড়িং ফড়িং খেললাম।
এরমধ্যেই আমাদের পরিক্ষা শুরু হলো।কয়েক দিন আর আমরা একসাথে থাকতে পারিনি।পরিক্ষা শেষ হতেই আবার সেই ফড়িং ধরার নেশা আমাদের শুরু হলো।ফড়িং ধরা যেন আমাদের নিত্যদিনের কাজ।তার পরথেকেই আমরা প্রতিদিম ফড়িং ধরি আর বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা করতাম।
বেশকিছু দিন পর হঠাৎ করে আমার আর রিমার মধ্যে ঝগড়া হল।ঝগড়ার বিষয় ছিল আমি ওকে আমার টিফিন খাবার খেতে দেয় নি।
তাই ও রাগ করে আর আমার সাথে কথা বলছে না।আমার খুব খারাপ লাগতে থাকলো।আমি রিমার সাথে কথা বলতে চাই কিন্তু রিমা কথা বলে না।ঠিক দুইদিন পর বিকেলে আমি একটা ফড়িং ধরে খেলছিলাম আর রিমা আমাকে বলল যে ও নাকি খেলবে।যাক আবার আমাদের একসাথে খেলাধুলা শুরু হলো। কিছুদিন পর স্কুল বন্ধ দিল পনের দিন।আমি আমার ফুপির বাসায় আর রিমা ওর নানির বাসায় চলে গেলাম।প্রতিদিন বিকেলে রিমার কথা আমার মনে হতো। আর খারাপ লাগতো।ভাবতাম রিমা থাকলে ফড়িং ফড়িং খেলা যেত।এইভাবেই কাটতে থাকলো কিছুদিন তার পর আমি বাড়িতে চলে আসলাম।রিমাও চলে এসেছে।কিন্তু ফড়িং গুলো গেল কই?? আর ফড়িং এর দেখা মেলে না।প্রতিদিন আমি আর রিমা বিকেলে ফড়িং এর খোজ করি কিন্তু আর দেখা মিলে না।তাই আমরা আবার অন্য খেলা শুরু করালাম কিন্তু কিছুতেই ফড়িং দিয়ে খেলার কথা ভুলতে পারি না।
রিমা নতুন খেলনা দিয়ে খেলা শুরু করে আর আমি বিকেলে দাদুর সাথে বেড়াতে যাই।আর ফড়িং দিয়ে খেলা হয় না।কিছুদিন পর আমি আব্বুকে বলে একটা কৃএিম ফড়িং কিনে নিলাম।ফড়িং টা নিয়ে আমি খুব খুশি হয়ে রিমার কাছে গেলাম তখন রিমা বলল যে এটা ও নিবে।কান্না কাটি আরম্ভ করে দিল।কি একটা অবস্থা। আমি আর আমার ফড়িং রিমা কে দিব না।কিন্তু রিমা নিবেই।কিছুতেই ছাড়ে না।অবশেষে রিমার বাবা রিমাকে একটা কৃএিম ফড়িং কিনে দেয়।আমরা দুইজন আবার আগের মতোই ফড়িং ফড়িং খেলতে লাগলাম।
আস্তে আস্তে আমরা বড় হতে লাগলাম।তাই এখন আর ফড়িং দিয়ে খেলি না।রিমাও বড় হয়ে গেছে।রিমা এখন ওর বান্ধবীদের সাথে খেলাধুলা করে,আর আমি আমার বন্ধুদের সাথে।
কিন্তু বেলা শেষে আমি না হয় রিমা আমাদের বারিতে আসবেই।সেই ছোট্টবেলার খেলার সাথি আমরা।
এখন আমরা বড় হয়ে গেছি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত তাই আর তেমন সময় পাই না।তেমন কথাও হয় না।
এখন নিজেরাই নিজেদের কে নিয়ে ব্যস্ত তাই একে অপরকে সময় দিতে পারি না।
কোন এক পরন্ত বিকেলে আমাদের সেই ছোট্ট বেলার কথা মনে হলে আমি আর রিমা হাসতে থাকি।এ যেন এক মিলনমেলা।
যতদিন বেঁচে থাকবো রিমার সাথে ফড়িং দিয়ে খেলার কথা মনে থাকবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
নিজে ভালো থাকবেন।
অপরকে ভালো রাখবেন।